Live MCQ- গুরুত্বপূর্ণ স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস্ | সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস

প্রিয় চাকরিপ্রত্যাশীগণ, Live MCQ- গুরুত্বপূর্ণ স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস্- সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস সংক্রান্ত ব্লগে আপনাদের স্বাগতম। আপনারা জানেন, দেশের উন্নয়ন, নীতি বাস্তবায়ন, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সিভিল সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কর্মকর্তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের কার্যক্রম পরিচালনায় এই সেবার অবদান অনস্বীকার্য। বহুল প্রত্যাশিত এই সার্ভিসে যোগদানের জন্য বেশিরভাগ চাকরির প্রার্থীগণ নিজেদের সপ্নের বীজ বপন করে থাকেন। সেক্ষেত্রে এই সার্ভিস সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রার্থীর সংখ্যাও অনেক। আশা করছি এ কনটেন্টটি পড়ার পর সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং পরবর্তীতে আর কোন কনফিউশন থাকবে না।
সিভিল সার্ভিসের সূচনা ঘটে ঊনবিংশ শতকে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়। ১৮৫৪ সালে লর্ড ম্যাকলে রিপোর্ট-এর ভিত্তিতে মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চালু হয়, যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। এর আগে নিয়োগ হতো পরিবার বা পৃষ্ঠপোষকতার ভিত্তিতে। সেই সময় এই প্রশাসনিক কাঠামোকে বলা হতো ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (ICS), যেটি ছিল ব্রিটিশ ভারতে শাসন ও প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। ICS কর্মকর্তারা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতেন এবং রাজস্ব আদায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের পর এই কাঠামো দুটি ভাগে বিভক্ত হয়—ভারত ও পাকিস্তানের নিজ নিজ প্রশাসনিক কাঠামোতে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ সালে সিভিল সার্ভিস পুনর্গঠিত হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (BCS) নামে আত্মপ্রকাশ করে।

সিভিল সার্ভিস কী
সিভিল সার্ভিস একটি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং নাগরিকদের সেবা প্রদান করে। এটি মূলত একটি পেশাদার, অরাজনৈতিক ও দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী বাহিনী, যারা সংবিধান ও সরকারের নীতিমালার আলোকে কাজ করে।
সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত থাকেন। এছাড়া, তারা সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের নানা স্তরে নিয়োজিত থাকেন। যেমন—উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, পুলিশ সুপার, কর কমিশনার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রভৃতি।
বাংলাদেশে সিভিল সার্ভিস সাধারণত বিভিন্ন ক্যাডারে বিভক্ত, যেমন: প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর, তথ্য, সমবায় ইত্যাদি। এই কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (BPSC) এর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত BCS পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। সিভিল সার্ভিস দেশের উন্নয়ন, নীতি বাস্তবায়ন, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সিভিল সার্ভিসের উদ্ভব ও ধরণ
প্রাচীন সভ্যতায় সিভিল সার্ভিসের ধারণা-
সিভিল সার্ভিসের উদ্ভব হয়েছে – প্রাচীন কালেই; যখন কিনা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। পূর্ববর্তী সময়ে, যখন নাগরিক কর্মচারীরা রাজার পরিবারের অংশ ছিল, তখন তারা আক্ষরিক অর্থে রাজার ব্যক্তিগত চাকর ছিল। পরবর্তীতে, রাজা ও রাজপুত্রদের ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে এবং কিছু দেশে রাজতন্ত্রকে উৎখাত করার ফলে ‘নাগরিক কর্মচারীদের’ নিয়োগ উক্ত বিভাগের মন্ত্রী ও বিভাগীয় প্রধানগণের ব্যক্তিগত পছন্দ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। উনিশ শতকে ইউরোপে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ এবং পদোন্নতি প্রায়শই ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক অনুকূল্যের উপর নির্ভর করে, তবে নিয়োগ লাভের পর নিম্ন ও মধ্যম স্তরের মেয়াদ ছিল সাধারণ। বর্তমানেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সিভিল সার্ভিসের পদগুলোর জন্য একই রকম ব্যবস্থা বিদ্যমান।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে সিভিল সার্ভিসের বিকাশ-
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্য অনুসারে, সিভিল সার্ভিসের ধারণার উদ্ভব হয়েছিল প্রাচীন মিশরীয় ও গ্রীক সভ্যতার সময়। পরবর্তীতে, রোমান সাম্রাজ্য প্রশাসনিক দপ্তর নির্মাণের মাধ্যমে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল; যা পরবর্তীতে রোমান ক্যাথলিক চার্চগুলোও অনুসরণ করে। চীনে খ্রিস্টপূর্ব ২ অব্দে সিভিল সার্ভিসের উদ্ভব হয় যা চীনা সভ্যতা/সাম্রাজ্যকে দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে স্থায়িত্ব দিয়েছে। সতের থেকে আঠারো শতকে গড়ে উঠা ব্রিটিশসহ বিভিন্ন উপনিবেশিক শক্তিও সিভিল সার্ভিস/আমলাতন্ত্রের উপর ভিত্তি করেই শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে পেরেছিল।
সিভিল সার্ভিসে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীরা কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন –
১. আন্তর্জাতিক নাগরিক কর্মচারী – বিভিন্ন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা যেমন – জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিমস্টেক, আসিয়ান প্রভৃতি কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মচারী। বিশ্ব পোস্টাল ইউনিয়ন (UPU) সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক সিভিল সার্ভিস বা আন্তর্জাতিক নাগরিক কর্মচারী সম্পর্কে ধারণা দেয়।
২. জাতীয় নাগরিক কর্মচারী – কোনো দেশের সরকার বা জাতীয় সংস্থা যখন তার সিভিল সার্ভিসের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্মচারী নিয়োগ করে থাকে, তখন জাতীয় নাগরিক কর্মচারী শ্রেণির উদ্ভব হয়। সিভিল সার্ভিস একটি দেশের ‘জনপ্রশাসনের’ অংশ।
সিভিল সার্ভিসের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য – আমলাতন্ত্র (Bureaucracy)। সাধারণত সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে আমলাদের নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
আমলাতন্ত্র (Bureaucracy)
‘আমলা’ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ – আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন। শব্দগতভাবে তাই, যে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন করে করে তাদেরকে আমলা বলে। আমলাদের সংগঠনকে বলা হয় “আমলাতন্ত্র”। আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ – Bureaucracy। ফরাসি ‘ব্যুরো’ (Bureau) এবং গ্রিক ‘ক্রেটিন’ (Kratein) শব্দ থেকে Bureaucracy শব্দের উদ্ভব হয়েছে। ‘ব্যুরো’ শব্দের অর্থ ‘লেখার টেবিল’ (Desk) আর ‘ক্রেটিন’ শব্দের অর্থ ‘শাসন’। সুতরাং, উৎপত্তিগত অর্থে আমলাতন্ত্রের অর্থ হচ্ছে – “Desk Government” বা “দপ্তর সরকার”। আক্ষরিক অর্থে ‘আমলাতন্ত্র’ বলতে আমলা বা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের শাসন বোঝায়।
এই কাঠামো সাধারণত স্থায়ী, বেতনভুক্ত, দক্ষ ও পেশাদার কর্মচারীদের সংগঠন। আমলারা পরস্পর সুশৃঙ্খলভাবে সংযুক্ত। তারা রাজনৈতিক নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেন। আমলাতন্ত্রের আধুনিক আলোচনার অগ্রনায়ক প্রখ্যাত জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েবার। তিনিই সর্বপ্রথম আমলাতন্ত্রকে একটি ‘আইনগত ও যুক্তিসঙ্গত মডেল’ (Legal and Rational Model) হিসাবে উপস্থাপন করেন। ওয়েবারই ছিলেন ‘আদর্শ আমলাতন্ত্রের’ (Ideal Bureaucracy) উদ্ভাবক।
এর কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
অধ্যাপক ফাইনার (Professor Finer) এর মতে, “আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী, বেতনভুক্ত এবং দক্ষ চাকুরিজীবী শ্রেণি” (The civil service is a body of officials – permanent, paid and skilled.)।
পল এইচ. অ্যাপলবি (Poul H. Appelby) বলেন, “আমলাতন্ত্র অসংখ্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে ও জটিল শর্তে সুশৃঙ্খলভাবে পরস্পর একত্রিত হওয়াকে বোঝায়” (Bureaucracy is inseparable from the phenomenon of systematic interaction of many persons associated in common and complex terms.)।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অগ (Ogg) এর মতে, “রাষ্ট্রীয় কর্মচারীবৃন্দ বা আমলা হচ্ছেন সুদক্ষ, পেশাদারি, অরাজনৈতিক, স্থায়ী এবং অধীনস্থ কর্মকর্তা” (The body of the civil servants is an expert, professional, non-political, permanent and subordinate staff.)।
অধ্যাপক ফিফ্নার ও প্রেসথাস (Professor Pfiffner and Prethus) বলেন, “আমলাতন্ত্র হলো বিভিন্ন ব্যক্তি এবং তাদের কার্যাবলিকে এমন একটি পদ্ধতিতে সংগঠিত করা যা সুসংহতভাবে গোষ্ঠী শ্রমের উদ্দেশ্যে অর্জনে সক্ষম হয়” (Bureaucracy is the systematic organization of tasks and individuals into a pattern which can effectively attain the end of group effort.)।
সুতরাং, আমলাতন্ত্র হলো স্থায়ী, বেতনভুক্ত, দক্ষ ও পেশাদার কর্মচারীদের সংগঠন। আমলাতন্ত্র সরকারের সিদ্ধান্ত ও নীতি বাস্তবায়ন করে থাকে।
সাংগঠনিক বৈশিষ্ঠ্য ও কার্যাবলি
নিম্নে আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ঠ্য ও কাজ উল্লেখ করা হলো –
| বৈশিষ্ঠ্য | প্রধান কার্যাবলি |
| পেশাগত দক্ষতা | আইন প্রণয়নে সহায়তা করা |
| সুনির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র | আইন কার্যকর করা |
| পদসোপানভিত্তিক (Hierarchical) সংগঠন | সরকারী নীতি নির্ধারণে সহায়তা করা |
| পেশাদার ও বেতনভুক্ত | বিচার সংক্রান্ত কাজ (ট্রেডমার্ক, জমি ক্রয়-বিক্রয়, রেজিস্ট্রি) |
| রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা | সরকারের নিকট জনসাধারণের দাবি-দাওয়া উত্থাপন |
| মেধাভিত্তিক নিয়োগ এবং জৈষ্ঠ্যতা ও কৃতিত্বমূলক পদোন্নতি | মন্ত্রী ও আইসভার সদস্যদের প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবেশন |
| কাজের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতা, অনমনীয় বিধি ও কার্যপদ্ধতির উপর অপ্রোজনীয় গুরুত্ব | বিধি মোতাবেক রুটিনমাফিক প্রশাসনিক কাজ সম্পাদন করা |
| কাজের স্থায়িত্ব নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিধিসম্মতভাবে স্থায়ী | পেশাগত ও নৈতিক মূল্যবোধের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা |

আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা ও সুশাসন
আমলাতন্ত্রকে আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ বলা হয়। আমলা বা সিভিল সার্ভেন্ট ছাড়া কোন দেশেই সরকার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সাধরণত রাষ্ট্রীয় নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মন্ত্রী বা রাজনৈতিক প্রশাসকগণ। এসব নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন আমলারা। রাজনৈতিক প্রশাসক বা মন্ত্রীদের সময়ের অভাব বা কর্মব্যস্ততা, তাদের টেকনিক্যাল ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি কারণে নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহনে তারা আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এতে অনেক সময় আমলারা নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করে থাকেন।
বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক রাষ্ট্রেই আমলাদের ক্ষমতা অপ্রতিহত গতিতে বেড়েই চলেছে। আমলা বা বেসামরিক কর্মকর্তাগণ রাজনৈতিক প্রশাসক বা মন্ত্রীদের মত জনপ্রতিনিধি নয়। জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক ও দাপ্তরিক। আমলাগণ তাদের কাজের জন্য সরাসরি জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। তাদের শিক্ষা-দীক্ষা, জীবনযাপন পদ্ধতি, গোষ্ঠীগত সংহতি সব কিছুই সাধারণ জনগণ অপক্ষা অনেকটাই ভিন্ন। এতে সরকারের প্রশাসনযন্ত্র জনবান্ধব না হয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে, অনেক সময় আমলারা ক্ষমতা প্রয়োগে সীমারেখা অতিক্রম করেন। পাবলিক সার্ভিস যাদের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার কথা তারা যদি জবাবদিহিতার বাইরে চলে যায় তাহলে জনসেবা ও জনকল্যাণ বাধাগ্রস্থ হবে। জনগণ হয়রানির শিকার হয়; প্রশাসনে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। জবাবদিহিতার অভাব ও অস্বচ্ছতার অভাবে আমলারা শুধু দুর্নীতিপরায়ণই হয়ে উঠে না, তারা হয়ে পড়ে স্বৈরাচারী। ফলে যা সৃষ্টি হয় তাকে ‘অপশাসন’ (Bad Governance) বলা হয়। এর ফলে প্রশাসনের সাথে সাথে সরকারও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে বিশ্বের বহু দেশে সরকারের পতনও ঘটেছে। একদিকে, আমলাতন্ত্র শৃঙ্খলা আনে; অন্যদিকে, এটি বিলম্বও ঘটাতে পারে।
আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতার সাথে সুশাসনের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ট ও নিবিড়। সুতরাং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সরকার পরিচালনা এবং প্রশাসন পরিচালনায় জবাবদিহিতার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মন্ত্রিসভা ও শাসন বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের নীতি, সিদ্ধান্ত ও কাজের জন্য আইনসভার নিকট জবাবদিহি করে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা আমলারা জনপ্রতিনিধিদের নিকট জবাবদিহি করে। শুধু তাই নয়, আমলারা তাদের উর্ধ্বতন আমলা-প্রশাসকদের নিকটও জবাবদিহি করে। বর্তমান জনকল্যাণকর রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা, কার্যাবলি, ও জবাবদিহিতা ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস (স্বাধীনতা পরবর্তী সময়)
স্বাধীনতার পরের সময়কাল-
বাংলাদেশ সরকারের সিভিল সার্ভিস বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (Bangladesh Civil Service) বা সংক্ষেপে BCS নামেই সর্বাধিক পরিচিতি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলাদেশে একটি দক্ষ সিভিল সার্ভিস গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশকে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। তার ফলে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চাকরির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। সংবিধানে সিভিল সার্ভিস শব্দটা ব্যবহার করা হয় নি, তবে সকল শ্রেণীর সিভিল সার্ভেন্টকে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাকরি সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক অধ্যায় (১৩৬ নং অনুচ্ছেদে) অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে –
– প্রথম, এই অনুচ্ছেদে সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের চাকরির শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদকে দেয়া হয়েছে।
– দ্বিতীয়, এতে সরকারকে সিভিল সার্ভিস পুনর্গঠন করার এবং সিভিল সার্ভিস সদস্যদের অসুবিধা ঘটতে পারে চাকরির এমন শর্তাবলি পরিবর্তন করারও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
সিভিল সার্ভিস – এর প্রয়োজনীয়তা মেটানোর উদ্দেশ্যে তৎকালীন সরকারের এক আদেশে ‘সরকারী কর্ম কমিশন’ গঠিত হয়। সংবিধানের নবম ভাগে (বাংলাদেশের কর্মবিভাগ) অংশে সিভিল সার্ভিস – এর প্রজাতন্ত্রের কর্মবিভাগ, নিয়োগের যোগ্যতা, শর্ত, মেয়াদ প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রশাসনিক সংস্কারের ধারা-
পাকিস্তান আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই সিভিল সার্ভিসকে পুনর্গঠিত করার কাজেও সরকার হাত দেয়। এই লক্ষ্যে সরকার প্রশাসনিক ও চাকরি পুনর্গঠন কমিটি (এএসআরসি, ১৯৭২) নামে একটি কমিটি গঠন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম.এ চৌধুরী (মুজাফফর আহমদ চৌধুরী) ছিলেন এই কমিটির প্রধান। চাকরি কাঠামো সম্পর্কে কমিটি ১৯৭৩ সালে প্রদত্ত রিপোর্টে নিম্নোক্ত সুপারিশ করে –
(ক) সাবেক অল পাকিস্তান সার্ভিস, অন্যান্য কেন্দ্রীয় সুপিরিয়ার সার্ভিস এবং সাবেক প্রাদেশিক সার্ভিসের মধ্যকার পার্থক্য বিলোপ করতে হবে। উচ্চতর ও নিম্নতর শ্রেণীগুলোর মধ্যকার পার্থক্যও বিলোপ করতে হবে এবং প্রত্যেক পেশার গ্রুপে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন গ্রেডিং প্রথা চালু করতে হবে;
(খ) বিভিন্ন গ্রুপের জন্য পদ সংরক্ষণের বর্তমান ব্যবস্থাও বিলোপ করতে হবে; এবং
(গ) সকল সিভিল সার্ভেন্টকে একটি একক শ্রেণীহীন গ্রেডিং কাঠামোয় সংগঠিত করতে হবে। সমস্ত সার্ভিস এই কাঠামোর আওতায় থাকবে যেখানে দক্ষতা ও দায়িত্বের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উপযুক্ত সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন বেতন স্তর থাকবে এবং প্রতিটি পদের সঠিক গ্রেডিং সেই পদের বিশ্লেষণের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
তবে এই সুপারিশগুলো কার্যকর করা হয় নি।
প্রশাসনিক সংস্কার বিদ্যমান সরকারি কাঠামো এবং এর কাজের ধরন ঢেলে সাজানো বা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর উত্তরাধিকারসূত্রে বাংলাদেশ যে প্রশাসন ব্যবস্থা লাভ করেছে তা ছিল মূলত উপনিবেশিক ধাঁচের। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তানে ব্রিটিশ প্রশাসনিক ব্যবস্থাই চালু ছিল। পাকিস্তান সরকার এ ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার তেমন কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করে নি। ফলে প্রশাসনে সাদা সাহেবদের স্থলাভিষিক্ত হন বাদামি সাহেবরা।
ব্যুরোক্রেসির চ্যালেঞ্জ ও সমাধান-
স্বাধীনতা লাভের পর বেসামরিক প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যমান একটি প্রাদেশিক প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে সরকার সমস্যার সম্মুখীন হয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেস্টোরেশন কমিটি নামে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয় বিভিন্ন পর্যায়ে বেসামরিক প্রশাসনের পুনর্গঠন এবং পাকিস্তানের সাবেক কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আত্তীকরণের বিষয় পরীক্ষা করে সে সম্পর্কে পরামর্শ দান করা। এ কমিটি ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি একটি অন্তবর্তীকালীন রিপোর্ট পেশ করে। এতে প্রশাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের জটিলতা পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়টি সাময়িকভাবে অসম্পূর্ণ রাখা হয়। এই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রাদেশিক সচিবালয়কে জাতীয় সচিবালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। এতে ২০টি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর/বিভাগ ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা রাখা হয়। ১৯৭২-৭৫ সময়কালে সরকার দুটি বড় কমিটি নিয়োগ করে, প্রশাসন ও চাকুরি পুনর্গঠন কমিটি ১৯৭২ এবং ন্যাশনাল পে কমিশন ১৯৭২।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে জেনারেল জিয়ার শাসনামলে, ১৯৭৬ সালে তিনি নতুন করে সরকারি চাকুরি সংক্রান্ত বিষয় এবং বেতন কাঠামো অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য সুপারিশ পেশ করতে একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটির নাম দেয়া হয় পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন। গঠিত কমিশন এ মত পোষণ করে যে, সাধারণ শ্রেণি বনাম বিশেষ শ্রেণির কর্মকর্তাদের মধ্যে বদ্ধমূল যে বিতর্ক চলে আসছে তা নিরসনের উপায় হচ্ছে সরকারি চাকুরির অবস্থানগত মানদণ্ডের আমূল পরিবর্তন এবং অভিন্ন বেতনস্কেল ও পদোন্নতির বিধান রাখা। কমিশন আরও যুক্তি প্রদর্শন করে যে, কেবল একটি পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে এবং অনেক পদ সংরক্ষিত রাখার মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক সাধারণ ক্যাডার সৃষ্টি করা উচিত নয়। কমিটির সুপারিশ অনুসারে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ২৮ টি ক্যাডার সৃষ্টি হয়, সিনিয়র সার্ভিসেস পুল গঠিত হয় এবং প্রবর্তন করা হয় নতুন জাতীয় গ্রেড ও বেতন স্কেল। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য সরকারও সিভিল সার্ভিস ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন।
সংবিধানে সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত বিষয়
সংবিধানে সিভিল সার্ভিস শব্দটা ব্যবহার করা হয় নি, তবে সকল শ্রেণীর সিভিল সার্ভেন্টকে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানের নবম ভাগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
নিম্নে সংবিধানের ৯ম ভাগের ১ম ও ২য় পরিচ্ছেদের এই সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলো দেওয়া হলঃ
নবম – অধ্যায়: বাংলাদেশের কর্মবিভাগ
প্রথম পরিচ্ছেদ – কর্মবিভাগ
| অনুচ্ছেদ নং | বর্ণনা |
|---|---|
| অনুচ্ছেদ – ১৩৩ | নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী |
| অনুচ্ছেদ – ১৩৪ | কর্মের মেয়াদ |
| অনুচ্ছেদ – ১৩৫ | অসামরিক সরকারী কর্মচারীদের বরখাস্ত প্রভৃতি |
| অনুচ্ছেদ – ১৩৬ | কর্মবিভাগ-পুনর্গঠন |
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – সরকারী কর্ম কমিশন
| অনুচ্ছেদ নং | বর্ণনা |
|---|---|
| অনুচ্ছেদ – ১৩৭ | কমিশন-প্রতিষ্ঠা |
| অনুচ্ছেদ – ১৩৮ | সদস্য-নিয়োগ |
| অনুচ্ছেদ – ১৩৯ | পদের মেয়াদ |
| অনুচ্ছেদ – ১৪০ | কমিশনের দায়িত্ব |
| অনুচ্ছেদ – ১৪১ | বার্ষিক রিপোর্ট |
এছাড়াও সংবিধানের মৌলিক অধিকার অংশের ৪০ নং অনুচ্ছেদে “পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা” তে বলা হয়েছে যে, যোগ্যতা অনুসারে নাগরিকগণ যেকোন পেশা পছন্দ করতে পারবে। এই অনুচ্ছেদটি যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিকদের সিভিল সার্ভিস পেশা পছন্দ করার স্বাধীনতা সম্পর্কিত।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC)
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এটি সংবিধানের বিধান অনুসারে, ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জন্য ৮ এপ্রিলকে – বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুসারে, প্রথমাবস্থায় ২ টি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করে, যা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (প্রথম) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (দ্বিতীয়) নামে অভিহিত হয়; কিন্তু পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন এর মাধ্যমে ১৯৭৭ সালে উভয় কমিশনকে একত্রিত করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন নামে একটিমাত্র কমিশন পদ্ধতি চালু করা হয়। সংবিধানে BPSC সম্পর্কিত অনুচ্ছেদগুলো হলো – ১৩৭ থেকে ১৪১ নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত।
সংবিধানের ১৩৭ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) গঠিত। অনুচ্ছেদে বলা হয় –
“আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারী কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান করা যাইবে এবং একজন সভাপতিকে ও আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হইবে, সেইরূপ অন্যান্য সদস্যকে লইয়া প্রত্যেক কমিশন গঠিত হইবে”।
সংবিধানের ১৪০ নং অনুচ্ছেদে কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে –
“(১) কোন সরকারী কর্ম কমিশনের দায়িত্ব হইবে
(ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা-পরিচালনা;
(খ) এই অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কোন বিষয় সম্পর্কে কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হইলে কিংবা কমিশনের দায়িত্ব-সংক্রান্ত কোন বিষয় কমিশনের নিকট প্রেরণ করা হইলে সেই সম্বন্ধে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশ দান; এবং
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন।
(২) সংসদ কর্তৃক প্রণীত কোন আইন এবং কোন কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত কোন প্রবিধানের (যাহা অনুরূপ আইনের সহিত অসমঞ্জস নহে) বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে কোন কমিশনের সহিত পরামর্শ করিবেন:
(ক) প্রজাতন্ত্রের কর্মের জন্য যোগ্যতা ও তাহাতে নিয়োগের পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়াদি;
(খ) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদান, উক্ত কর্মের এক শাখা হইতে অন্য শাখায় পদোন্নতিদান ও বদলিকরণ এবং অনুরূপ নিয়োগদান, পদোন্নতিদান বা বদলিকরণের জন্য প্রার্থীর উপযোগিতা-নির্ণয় সম্পর্কে অনুসরণীয় নীতিসমূহ;
(গ) অবসর ভাতার অধিকারসহ প্রজাতন্ত্রের কর্মের শর্তাবলীকে প্রভাবিত করে, এইরূপ বিষয়াদি; এবং
(ঘ) প্রজাতন্ত্রের কর্মের শৃঙ্খলামূলক বিষয়াদি”।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন সংক্রান্ত তথ্য:
- বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কমিশনের কার্যালয় রাজধানী ঢাকার আগারগাও-এ অবস্থিত।
- বর্তমানে পাবলিক সার্ভিসের ক্যাডার সংখ্যা – মোট ২৬টি। ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ইকোনমিক ক্যাডারকে প্রশাসন ক্যাডারের সাথে একীভূত করা হয়। এর ফলে ক্যাডার সংখ্যা ২৭ থেকে ২৬ – এ পরিণত হয়। এগুলোর মধ্যে ১৪টি সাধারণ ও ১২টি পেশাগর/কারিগরি ক্যাডার।
- পাবলিক সার্ভিস কমিশন – এর প্রধানের পদবী – চেয়ারম্যান; মেয়াদ – ৫ বছর। কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান – এ. কিউ. এম. বজলুল করিম।
- বর্তমান চেয়ারম্যান (১৫-তম) – মোবাশ্বের মোনেম।তিনি ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও কমিশনে আরো ১২ জন সদস্য রয়েছেন। কমিশনের ইতিহাসে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান – ড. জেড.এন তাহমিনা বেগম।

সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান –
- বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা Bangladesh Public Administration Training Centre (BPATC) – ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি বাংলাদেশের পাবলিক সার্ভিসের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। এটি চারটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে –
- Bangladesh Administrative Staff College (BASC)
- National Institute of Public Administration (NIPA)
- Civil Officer’s Training Academy (COTA)
- Staff Training Institute (STI)
BPATC – এর অবস্থান – ঢাকার সাভারে। প্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদবী – রেক্টর। বর্তমান রেক্টর – সাঈদ মাহবুব খান।
- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমি (BCSAA) বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান যা ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি রাজধানী ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি (BPA) – ১৯১২ সালের জুলাইয়ে প্রতিষ্ঠিত। বিপিএ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল– মেজর এইচ. চিমনী (Major H. Chamney)। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীণ এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমি। এখানে, পুলিশের এ.এস.পি (বিসিএস), এস.আই/সার্জেন্ট ও কনস্টেবল – দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটি রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত। এর প্রধান (প্রিন্সিপাল) – এ.আই.জি.পি সমমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের প্রকৃতি
বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিস পুরোপুরি আমলাতান্ত্রিক। সরকারের জনকল্যাণকর নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে জনসেবা নিশ্চিত করা আমলাদের কাজ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর উল্টোটাই ঘটে। তাদের কাজকর্ম অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিক (Formal) করতে গিয়ে জনগণের সমস্যার মানবিক দিকটি উপেক্ষা করে। আমলাতন্ত্রে ‘লালফিতার দৌরাত্ম্য’ (Red Tapism) খুব বেশি। আমলাতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকতা, দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ি বোঝাতে এটি ব্যবহার হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে Red Tapism কথাটির প্রচলন ঘটে।
জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাবে অনুন্নত বিশ্বে আমলাগণ নিজেদেরকে ‘জনগণের সেবক’ মনে না করে ‘জনগণের প্রভু’ মনে করে। দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসনই এর জন্য দায়ী। এর ফলে আমলাদের সাথে সাথে সরকারও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বাংলাদেশে আমলাদের আচরণ আরো মারাত্মক। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনামলে আমলারা যেভাবে নিজেদেরকে ‘জনগনের সেবক না ভেবে প্রভু’ মনে করতেন, বাংলাদেশের আমলাদের মানসিকতা আজও অনেকটা তেমনি আছে। নিজেদেরকে আজও তারা ‘স্বর্গে-সৃষ্ট এক কর্ম ব্যবস্থা’ (a heaven born service) বলে মনে করেন এবং আত্মতুষ্টি লাভ করেন।
তবে পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে বাঙ্গালি আমলাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত আইন অমান্য ও অসহযোগ আন্দোলনকে সফল করার জন্য বাঙ্গালি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রায় সকলেই সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অনেক বাঙ্গালি আমলারাই সরাসরি যুদ্ধে ও অনেকেই মুজিবনগর সরকারে যোগদান করে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান হানাদারদের আক্রমণে বহুসংখ্যক বাঙ্গালি সামরিক-আধাসামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাকে জীবন হারাতে হয়েছিল।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সামরিক-বেসামরিক শাসকগণ ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলের মত করেই আমলাতন্ত্রকে গড়ে তোলে। এর সাথে পরবর্তীতে যুক্ত হয় – দলীয়করণ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি। ফলে এখনো সেই ঔপনিবেশিক আমলের মনোভাবসম্পন্ন আমলাতন্ত্র বাংলাদেশে বিদ্যমান। জনগনের চাওয়া-পাওয়া, আবেদন আমলাতন্ত্রের ‘লালফিতার’ বাঁধনে আটকে পড়ে থাকে। সমস্যা-সমাধানে বিধি মোতাবেক যথাযোগ্য নিয়মে (Through Proper Channel) অগ্রসর হতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং সমস্যা আরো জটিল হয়ে পড়ে। এমনকি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনের মূহুর্তেও অনেক সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় না। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা, রাজনীতিকীকরণ, ইত্যাদি কারণে আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র অনেকটাই বেপরোয়া।
তবে, আমলাদের মধ্যে এখনো দেশপ্রেম হারিয়ে যায়নি। আমলাদের অনেকেই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে চান, দুর্নীতির নির্মূল চান, জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে সেবা করতে চান। বিগত সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় যেমন – প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি সময়ে মানুষদের রক্ষায় বাংলাদেশের আমলারা দেশে বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে, আমলাদের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত হলে, দেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠলে আরো দক্ষতার সাথে, নিবেদিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য আমলারা তাদের ভূমিকা রাখতে পারবে।

সচিবালয়
সচিবালয় দেশের গোটা প্রশাসন ও সরকারি কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। প্রধানত এখানেই সরকারের সকল নীতি নির্ধারণী সংস্থা অবস্থিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার ছিল কার্যত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারেরই অবিকল প্রতিরূপ। নির্বাচিত সরকার থাকাকালে প্রাদেশিক মন্ত্রীদের অধীনে কয়েকটি বিভাগ সমন্বয়ে গঠিত এর একটি সচিবালয় থাকত। স্বাধীনতা লাভের পর বিদ্যমান প্রাদেশিক প্রশাসনিক কাঠামোটি জাতীয় সরকারের প্রশাসনে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল থেকে কার্যকর স্বাধীনতার ঘোষণাবলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় এবং এই সরকারের সদরদপ্তর ছিল মুজিবনগর। অস্থায়ী সরকারের অধীনে কতগুলি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসহ একটি সচিবালয় ছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর স্বাধীন বাংলাদেশে এই সচিবালয়টি ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়।
১৯৭২ সালে সাময়িক সংবিধানের ভিত্তিতে অস্থায়ী সরকারের বিলুপ্তি ঘটে এবং তাতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠনের ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির শেষ নাগাদ সম্প্রসারিত একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে ১৯টি মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে সচিবালয়টিও পুনর্গঠিত হয়। ১৯৯৯ সালে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৮ ও ৪৬।
- বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা – ৪৩টি (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়, সশস্ত্র বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বাদে ৩৯টি।)। ৪৩টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ৩৯টি মন্ত্রণালয়ের নামের শেষে ‘মন্ত্রণালয়’ শব্দটি রয়েছে।
- সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদে অর্পিত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতির জারি করা আদেশে কার্যবিধি অনুসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন নিষ্পন্ন হয়। অধিকন্তু, সরকারি কার্যবিধির ৪(১০) ধারার আওতায় প্রস্ত্তত ‘সচিবালয় নির্দেশাবলী’ নামে আরেকটি পৃথক দলিলের মাধ্যমে সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগে সরকারি কাজকর্ম সম্পাদনের ধরন নির্ধারিত হয়।
- প্রধানমন্ত্রী নিজে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন এবং একজন মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর ওপর এক বা একাধিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন। ক্ষেত্র বিশেষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিন্নভাবে নির্দেশিত না হলে তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়/বিভাগের যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
- সিভিল সার্ভিসের সর্বোচ্চ পদবী – ক্যাবিনেট সেক্রেটারি বা মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
- যেকোন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান হলেন – মন্ত্রী।
- সচিব – হলেন মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি এর প্রশাসন, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ন্যস্ত যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়/বিভাগ, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও অধীনস্থ অফিসসমূহের কার্যবিধি যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কিনা তাও সতর্কতার সঙ্গে তদারক করেন। তিনি মন্ত্রণালয়/বিভাগের কার্যকলাপ সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে অবহিত রাখেন।
- বিভাগ/মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত নীতিসমূহ সাধারণত কয়েকটি নির্বাহী সংস্থা কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। সেগুলি হলো সংযুক্ত অধিদপ্তর ও অধীনস্থ অফিসসমূহ। সংযুক্ত অধিদপ্তর বলতে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত সংস্থাগুলিই বোঝায়। সংযুক্ত অধিদপ্তরগুলি সাধারণত তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক গৃহীত নীতিসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাহী নির্দেশনা প্রদান করে।
উপমহাদেশের পাবলিক সার্ভিসের ইতিহাস
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক ধারা-
সিভিল সার্ভিস ভারতের ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূল প্রতিষ্ঠান ছিল সিভিল সার্ভিস। ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস ছিল দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সরকারের ফসল। কিন্তু ভারতীয় সিভিল সার্ভিস তা ছিল না। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছিল প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৭৬৫-১৮৫৮) এবং পরে ব্রিটিশ রাজের (১৮৫৮-১৯৪৭) উপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ার প্রয়োজন ও পরিবেশ-পরিস্থিতি থেকে।
১৭৮৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূখন্ডগত মালিকানা প্রধানত ‘সুপারভাইজার’ নামে অভিহিত কোম্পানির স্থানীয় বাণিজ্যিক অফিসারদের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশীয় সংস্থাগুলোর দ্বারা পরিচালিত হতো। কোম্পানির সিভিল সার্ভেন্টদের বলা হতো কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভেন্ট। কোম্পানির শাসনের অবসান পর্যন্ত এবং তারপরও দীর্ঘদিন এ পদবিটি চালু ছিল। এ সার্ভিসের সদস্যরা ভারতে চাকরির জন্য ভারত সচিবের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হতেন বিধায় এ চাকরির নাম হয়েছিল কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিস (সিসিএস)।
বঙ্গদেশে উপনিবেশিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিষয়াবলি ব্রিটিশ রাজের সনদে নির্দেশিত শর্তাবলি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হতো। সনদের অধীনে কোম্পানি ‘পূর্ব ভারতীয় অঞ্চলে’ স্বীয় কর্মচারীদের উপর ব্রিটিশ রাজের পক্ষ থেকে সার্বভৌম ক্ষমতা ভোগ করত।
১৭৬০ সালে চট্টগ্রাম, বধর্মান ও মেদিনীপুরে ভূখন্ডগত অধিকার লাভ এবং পরবর্তীকালে ১৭৬৫ সালে সুবাহ বাংলার উপর দেওয়ানি অধিকার লাভের ফলে ভূখন্ডগত অধিগ্রহণ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো এক ধরনের বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক কাঠামো গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বঙ্গদেশে ফোর্ট উইলিয়মের প্রেসিডেন্সি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ক্লাইভ দেওয়ানি বিষয়ে বঙ্গদেশে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হয়ে দাঁড়ান। দেওয়ানি প্রশাসন পরিচালনার জন্য তিনি প্রাথমিক পর্যায়ের সিভিল সার্ভিস চালু করেন। এ সিভিল সার্ভিসের প্রধান ছিলেন চার সদস্যের একটি বাছাই কমিটির প্রেসিডেন্ট জন কার্টিয়ার। দেশীয় রাজস্ব সংগ্রাহকদের কাজকর্ম তদারকির জন্য জেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়। দেশীয় নায়েব দেওয়ান সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খানের অনুষঙ্গ বা সহযোগী শক্তি হিসাবেই কেবল এ অস্থায়ী বা সাময়িক সিভিল সার্ভিস গঠন করা হয়।
সৈয়দ মোহাম্মদ রেজা খানের নেতৃত্বাধীন দেশীয় সংস্থাগুলোই মূলতঃ কোম্পানির দেওয়ানি প্রশাসন দেখাশোনা করত। এ দেওয়ানি প্রশাসনকে সাধারণভাবে বলা হতো ডায়ার্কি বা দ্বৈতশাসন। নায়েব দেওয়ান ও কোম্পানির মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগির ভিত্তিতেই প্রারম্ভিক পর্যায়ের সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন ক্লাইভ। এ ডায়ার্কি বা দ্বৈত শাসনের ফল হয়েছিল বিপর্যয়কর। এর পরিণতিতে ১৭৬৮-৬৯ সালের মহা মন্বন্তর সৃষ্টি হয়।
১৭৭২ সালে ডায়ার্কি বা দ্বৈতশাসনের অবসান হয়। এরপর বঙ্গদেশকে ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং অ্যাক্ট বলে কোম্পানির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের ফোর্ট উইলিয়ম ও কাউন্সিলের গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ওয়ারেন হোস্টিংস রেগুলেটিং অ্যাক্ট বলে প্রতিষ্ঠিত নয়া আমলাতন্ত্রের প্রধান হয়ে দাঁড়ান। কাউন্সিল নামে অভিহিত চার সদস্যের একটি কমিটি তাকে পরামর্শ ও সহায়তা দিতেন। রেগুলেটিং অ্যাক্ট বলে বঙ্গদেশের জন্য গঠিত ক্ষুদ্র আমলাতন্ত্রিক কাঠামোর শীর্ষে ছিল এ কাউন্সিল। ক্ষমতার স্তর বিন্যাসে এ কাউন্সিলের পরেই ছিল রাজস্ব আদায়কারী দেশীয় জেলা কালেক্টর, যাদের বলা হতো দেওয়ান। তখনও নওয়াবি প্রতিষ্ঠানই বিচারবিভাগের ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
সংক্ষেপে বলতে গেলে প্রথমদিকের উপনিবেশিক রাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিস ছিল একদিকে রাজস্ব আদায় এবং অন্যদিকে যুগপৎ ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা। নবগঠিত সিভিল সার্ভিস ছিল এমন এক ব্যবস্থা যার শীর্ষভাগে ছিলেন ইউরোপীয়রা এবং নিম্নস্তরে ছিলেন দেশীয়রা। সকল দেওয়ান বা স্থানীয় পর্যায়ের রাজস্ব প্রশাসকরা ছিলেন দেশীয়। ওয়ারেন হোস্টিংসের প্রশাসনিক ধারণাটির উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানি-রাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিসে দেশীয় লোকদের সম্পৃক্ত করা। তিনি ফৌজদারি প্রশাসনের জন্য সদর নিযামত আদালত গঠন করেন এবং সে আদালত পরিচালনার সুযোগ দেন মূলত দেশীয় বিচারকদের।
ব্রিটিশ শাসনে আমলাতন্ত্রের বিকাশ-
১৭৮৪ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি আইন পাস হয় যা সাধারণভাবে পিট্স ইন্ডিয়া অ্যাক্ট নামে অভিহিত। আইনে নতুন সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্দেশ করে কাউন্সিলের গভর্নর-জেনারেল হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত অথচ জনপ্রিয় জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসকে নিয়োগ করা হয়। আইনে ভারতের বিষয়াবলির জন্য একটি বোর্ড অব কমিশনার গঠন করা হয় যা সচরাচর বোর্ড অব কন্ট্রোল হিসেবে পরিচিত। এতে থাকতেন রাজা কর্তৃক নিযুক্ত কন্ট্রোলার অব এক্সচেকার, একজন সেক্রেটারী অব স্টেট এবং চারজন প্রিভি কাউন্সিলর।
কর্নওয়ালিস কোডের অধীনে পুনর্গঠিত সিভিল সার্ভিসকে বলা হতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিস। নবগঠিত কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসের সদস্যদের প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নয় বরং কোর্ট অব ডিরেক্টরদের এক একজন সদস্যের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নিয়োগ করা হতো। বঙ্গদেশে কোম্পানির সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রত্যেক ডিরেক্টরের ক্যাডেট কোটার বিধিবদ্ধ সুবিধা ছিল। সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষানবিশী পর্যায় সম্পন্ন করার পর ক্যাডেটদের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির কালেক্টর হিসেবে ও অন্যান্য নির্বাহী পদে নিয়োগ করা হতো।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮১৩ সালে তার একচেটিয়া অধিকার আংশিকভাবে এবং ১৮৩৩ সালে পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে। ১৮৩৩ সালের আইনবলে কোম্পানি রাজা বা রানীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় একটি সংস্থায় পর্যবসিত হয়। এ আইনে নয়া উদারপন্থী পার্লামেন্ট কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসে (সিসিএস) চাকরি ও সার্ভিস প্রদানের আদলে দেশীয়দের ক্ষমতার ভাগ দেয়ার অঙ্গীকার করে।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ১৮৫৩ সালের শেষ চার্টার অ্যাক্টের আগ পর্যন্ত কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসের দ্বার ভারতীয়দের জন্য বন্ধ ছিল। ১৮৫৩ সালের ওই চার্টার অ্যাক্ট বলে সিভিল সার্ভিসে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে রিক্রুটমেন্টের ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ বিলোপ করা হয়। ১৮৫৪ সাল থেকে মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সিসিএস-এ লোক নিয়োগের ব্যবস্থা চালু হয়ে যায়।
১৮৬১ সালের আইনবলে কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসের নতুন নামকরণ হয় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস)। এটি করা হয় ব্রিটিশ ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল ও প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং – এর শাসনামলে। তবে আইসিএস-এ ভারতীয়দের অংশগ্রহণের ব্যাপারটা মোটামুটি অসম্ভবই থেকে যায়। কারণ ভারতীয়দের লন্ডনে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হতো, আর সেটাও করতে হতো অত্যন্ত কম বয়সে এবং তাদের ইংল্যান্ডে দু’বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে থাকতে হতো। আইসিএস পরীক্ষা দেয়ার জন্য ইংল্যান্ড যাওয়া বিপুল খরচের ব্যাপারই শুধু ছিল না, সমুদ্র পাড়ি দেয়ার বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিধিনিষেধেরও সম্মুখীন হতে হতো। মুসলমানরা তখনও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে নি বলে তারা আইসিএস পরীক্ষা দিতে পারত না।
১৮৬৩ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ভারতীয় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের সদস্য হতে পারে নি। পরের বছর ১৮৬৪ সালের আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর – ই প্রথম ভারতীয় হিসেবে আইসিএস সদস্য হন।
সিভিল সার্ভিসে অধিক সংখ্যক ভারতীয়ের যোগদানের সুবিধার্থে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড লিটন (১৮৭৬-১৮৮০) ১৮৭৯ সালে একটি বিধিবদ্ধ সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্যবস্থায় যেসব পদ আগে কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিসের অধীনে ছিল তার এক-ষষ্ঠাংশ পদ প্রাদেশিক সরকারগুলোর মনোনীত ব্যক্তিদের দ্বারা পূরণের বিধান রাখা হয়। এ নতুন চাকরিতে নিযুক্ত ব্যক্তিদের অবশ্য কুলীন বংশীয় লোক হতে হতো। এটি ছিল একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যার উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় এলিট শ্রেণীর লোকদের ক্ষমতার ভাগ দেওয়া। কিন্তু এ ব্যবস্থায় প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায় নি।
ভারতে আইসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠান এবং সিভিল সার্ভিসে আরোও বেশি সংখ্যায় ভারতীয়দের অংশগ্রহণের ক্রমবর্ধমান দাবির প্রেক্ষাপটে একটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা সরকারি কর্মকমিশন গঠন করা হয়। স্যার সি. আইচিসনকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। সিনিয়র আইসিএস সদস্য ও পাঞ্জাবের প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর আইচিসন একটি পরিকল্পনা উদ্ভাবন করেন যা ১৮৮৯ সালে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত এবং ১৮৯১ সালে বাস্তবায়িত হয়। নয়া পরিকল্পনায় সংবিধিবদ্ধ সিভিল সার্ভিস বিলুপ্ত করা হয়। সরকারের বেসামরিক অফিসারদের তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়,
- ইম্পেরিয়াল ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস,
- প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস ও
- সাব-অর্ডিনেট সিভিল সার্ভিস।
প্রথমটির ক্ষেত্রে রিক্রুটমেন্টের ব্যবস্থা আগের মতো ইংল্যান্ডেই রাখা হয়। তবে বলা হয় যে, যেসব ভারতীয় ইংল্যান্ডে গিয়ে লন্ডনে পরীক্ষা দিতে পারবে তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া যাবে। অপর দুই সার্ভিসের ক্ষেত্রে রিক্রুটমেন্টের ব্যবস্থা ভারতেই করা হয়। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইসিএস পরীক্ষা একই সঙ্গে ইংল্যান্ড ও ভারতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯২২ সালে ভারতে ‘ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ এর অধীন ভারতের এলাহাবাদে ও পরে দিল্লীতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়; পাশাপাশি লন্ডনেও পরীক্ষা অনুসষ্ঠিত হতে থাকে।
১৯১৯ সালের Government of India Act ও ১৯২৪ সালে লী কমিশন (Lee Commission) এর সুপারিশক্রমে, ১ অক্টোবর, ১৯২৬ সালে ভারতের ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ গঠিত হয়। চেয়ারম্যান ছাড়াও এর আরো ৪ জন সদস্য এর সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হয়।
সম্প্রদায়গতভাবে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে ভারতের পূর্বাঞ্চলের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব কার্যত ছিল না বললেই চলে। রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার ১৯২৫ সালে ভারতীয় ও বঙ্গীয় সিভিল সার্ভিসে কুলীন বংশীয় শিক্ষিত মুসলমানদের মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে খুব সামান্য সংখ্যকই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পেরেছিল।
১৯৩৪ সাল নাগাদ ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে সাতটি সর্বভারতীয় সার্ভিস ও পাঁচটি কেন্দ্রীয় বিভাগ নিয়ে গঠিত ছিল যার সবগুলোই ছিল সেক্রেটারি অফ স্টেটের নিয়ন্ত্রণে এবং অন্যদিকে তিনটি কেন্দ্রীয় বিভাগ ছিল ইম্পিরিয়াল সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের যৌথ নিয়ন্ত্রণে। ভারত বিভাগের পর, সিভিল সার্ভিসের অংশ বিশেষের নতুন নামকরণ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে করা হয় সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)। অপরদিকে ভারতীয় অংশের সার্ভিসের নাম পূর্ববর্তী ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসই বহাল থাকে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালের আগের ভারতীয় উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিসের ইতিহাসের সাথে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস সম্পৃক্ত।
১৯৪৭ সাল পরবর্তী অধ্যায়:
১৯৪৭ পরবর্তী অধ্যায়ে সিভিল সার্ভিসের উন্নয়নের ধারার বড় ধরনের বৈশিষ্ট্য হলো ১৯৪৭ সালের আগে সিভিল সার্ভিসের যে কাঠামো ও কার্যাবলির অস্তিত্ব ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতাই পরবর্তী সময়ে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়। সার্ভিসগুলো পুনর্গঠনের জন্য বিভিন্ন সময়ে বহু কমিশন/কমিটি গঠিত হওয়া সত্ত্বেও সেই ঐতিহ্যই চলতে থাকে। বেশিরভাগ গবেষণায় এর কারণ হিসেবে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) ক্যাডারদের প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ ছাড়া অন্যান্য কারণও রয়েছে।
অন্য কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হলো রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ও শাসনকার্য পরিচালনার প্রারম্ভিক সাংবিধানিক কাঠামোর অভাব, স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠীসহ পাঁচটি প্রদেশের অস্তিত্ব, যে কারণে একটি কেন্দ্রীয় সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব লাভ করে এবং বিশেষভাবে যে কথাটি উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো অল-পাকিস্তান সার্ভিস পূর্ববর্তী বছরগুলোর ঐতিহ্যের ধারায় গড়ে উঠেছিল
১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি কাঠামো প্রধান দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল:
- (ক) সাবেক অল পাকিস্তান সার্ভিস, যেমন সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি), পুলিশ সার্ভিস অব পাকিস্তান (পিএসপি) এবং
- (খ) সাবেক সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস যার অন্তর্ভুক্ত ছিল পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস (পিএফএস), পাকিস্তান অডিট অ্যান্ড একাউন্টস সার্ভিস, পাকিস্তান মিলিটারি অ্যান্ড একাউন্টস সার্ভিস, পাকিস্তান ট্যাক্সেশন সার্ভিস, পাকিস্তান রেলওয়ে একাউন্টস সার্ভিস, পাকিস্তান কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ সার্ভিস, সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস (সিএসএস), পাকিস্তান মিলিটারি ল্যান্ড অ্যান্ড ক্যান্টনমেন্ট সার্ভিস, পাকিস্তান পোস্টাল সার্ভিস, সেন্ট্রাল ইনফরমেশন সার্ভিস।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর সিভিল সার্ভিস
সার্কভুক্ত ৮টি দেশের সিভিল সার্ভিসের নাম ও অন্যান্য তথ্যসমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
| দেশ | পাবলিক সার্ভিস কমিশন | প্রতিষ্ঠাকাল | আনুষাঙ্গিক তথ্য |
|---|---|---|---|
| ভারত | ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC) | ১ অক্টোবর, ১৯২৬ সাল | ১ জন চেয়ারম্যান ও ৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত। ৩ ক্যাটাগরিতে (All India Services, Central Services and State Services) ২৪ ধরনের পরীক্ষার আয়োজন করে। ১৯৫০ সালে এটি সংবিধানে বিধিবদ্ধ হয়। |
| পাকিস্তান | ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন (FPSC) | ১৯২৬ সাল | ১ জন চেয়ারম্যান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। এটি সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস (CSS) পরীক্ষার আয়োজন করে। ১৯৭৩ সালে সংবিধানের মাধ্যমে বিধিবদ্ধ হয়। |
| বাংলাদেশ | বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) | ৮ এপ্রিল, ১৯৭২ সাল | মোট ২৬টি ক্যাডারের (১৪টি সাধারণ ও ১২ টি টেকনিক্যাল) জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (BCS) পরীক্ষাসহ আরো কিছু পরীক্ষা আয়োজন করে। বর্তমানে ১ জন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। |
| নেপাল | পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC) | ১৫ জুন, ১৯৫১ সাল | ২০০৭ সালের নেপালি সংবিধান অনুযায়ী নেপাল পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ১ জন চেয়ারম্যান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। সদস্যদের পদের মেয়াদ ৬ বছর। |
| ভুটান | রয়েল সিভিল সার্ভিস কমিশন (RCSC) | ১৯৮২ সাল | ১ জন চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। সর্বশেষ, ২০১০ সালে ভুটান সিভিল সার্ভিস রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করে। |
| শ্রীলঙ্কা | পাবলিক সার্ভিস কমিশন (PSC) | ১৫ মে, ১৯৪৬ সাল | ১৯৭২ সালে সংবিধানের মাধ্যমে বিধিবদ্ধ হয়। ১ জন চেয়ারম্যান ও ৫ – ৯ জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। |
| মালদ্বীপ | মালদ্বীপ সিভিল সার্ভিস কমিশন (MCSC) | ২৩ অক্টোবর, ২০০৭ সাল | ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন ভাইস-চেয়ারম্যান সহ ৫ জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। |
| আফগানিস্তান | Independent Administrative Reform and Civil Service Commission (IARCSC) | প্রতিষ্ঠা – ২৩ মে, ২০০২ কার্যক্রম শুরু – ১০ জুন, ২০০৩ | ১ জন চেয়ারম্যান ও ৫ জন কমিশনার নিয়ে কমিশন গঠিত। |

বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের পাবলিক সার্ভিস
বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের পাবলিক সার্ভিস ও তার কমিশন নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো –
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিক বা লিখিত সংবিধান নেই। যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিসের নাম – Her Majesty’s Home Civil Service বা Her Majesty’s Civil Service। এটি শুধু Home Civil Service নামেও পরিচিত। যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিসে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা বা ক্রাউন কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত হয়। তারা সংসদীয় কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা নয়। Northern Ireland Civil Service যুক্তরাজ্যের Home Civil Service – এর অন্তর্ভূক্ত নয়।
- যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিস বিশ্বের প্রাচীণতম সিভিল সার্ভিসের একটি। সংসদীয় ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বিশ্বে পরিচিত করার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
- আগে থেকে প্রচলন থাকলেও আঠার শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার ও অর্থনৈতিক বিকাশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সিভিল সার্ভিসকে সুগঠিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ অনুদান দেয়। এর ফলে দক্ষ কর্মচারি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৮০৬ সালে কোম্পানি লন্ডনে East India Company College প্রতিষ্ঠা করে।
- ১৮৫৪ সালে Charles Trevelyan (ব্রিটিশ সিভিল সার্ভেন্ট ও উপনিবেশিক প্রশাসক) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, সুসংগঠিত, দক্ষ সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার ও মেধারভিত্তিতে তাতে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করে। তার সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৮৫৫ সালে সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠিত হয়।
- যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিস কমিশনাররা সিভিল সার্ভেন্ট নয় বরং মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে – সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা। তারা রাজা/রাণী কর্তৃক নিয়োগকৃত ও কাজের ব্যাপারে প্রতিবছর সরাসরি রাজা/রাণীকে রিপোর্ট (জবাবদিহি) করেন।
- যুক্তরাজ্যের Home Civil Service – এর সর্বোচ্চ পদবী ক্যাবিনেট সেক্রেটারি।
- যুক্তরাজ্যের সিভিল সার্ভিস সংক্রান্ত কিছু বিষয় – Permanent Secretaries Management Group (PSMG); Civil Service Steering Board (CSSB) ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিস ফেডারেল গভর্নমেন্ট কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত। সামরিক বাহিনীর পদ ব্যতীত নির্বাহী, বিচারিক ও আইনসভা সংক্রান্ত পদগুলো সিভিল সার্ভিসের আওতায় পড়ে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য এবং স্থানীয় সরকার সত্ত্বাগুলিতে প্রায়শই তুলনামূলক সিভিল সার্ভিস সিস্টেম থাকে যা বিভিন্ন সময় জাতীয় ব্যবস্থায় মডেল করা হয়।
- যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিসের উত্তরসূরী Advisory Board of the Civil Service ১৮৭১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস. গ্রান্ট এর সময়ে গঠিত হয়। এই বোর্ডের দায়িত্ব ছিল সিভিল সার্ভিসে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ প্রদান করা। Personnel Management (OPM) এর মতামত অনুসারে, ABCS সিভিল সার্ভিসকে পুনর্গঠনের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছিলেন।
- ১৮৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠিত হয় Pendleton Civil Service Reform Act – 1883 অনুসারে। ফেডারেল সিভিল সার্ভিস কর্মচারীদের জন্য সদ্য-বাস্তবায়িত মেধাভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির তদারকি করার জন্য কমিশনটি গঠন করা হয়েছিল।
- সিভিল সার্ভিস কমিশন ৩ জন সদস্য (কমিশনার) নিয়ে গঠিত। সদস্যদের প্রেসিডেন্ট সিনেটের পরামর্শ ও অনাপত্তির প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রদান করে থাকে। একই পার্টি থেকে দুই জনের বেশি সদস্য নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
- ১৯৭৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সার্ভিস কমিশন Civil Service Reform Act অনুসারে পুনর্গঠিত হয়। এই পুনর্গঠনের সময় বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং ৩টি আলাদা সংস্থায় সিভিল সার্ভিস কমিশনকে ভাগ করা হয়। তিনটি সংস্থা হচ্ছে –
· Office of Personnel Management – বিধিমালা বাস্তবায়ন এবং ফেডারাল এক্সিকিউটিভ ওয়ার্কফোর্স পরিচালনার তদারকি।
· Merit Systems Protection Board– কর্মসংস্থান সম্পর্কিত শুনানি এবং আবেদনগুলি প্রক্রিয়া করণ।
· Federal Labor Relations Authority – গাইডলাইন স্থাপন এবং সম্মিলিত দর কষাকষির সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সমাধান করণ। - যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার ক্ষমতায় আসলে সিভিল সার্ভিসের প্রধান পদগুলোতে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রশাসন পরিবর্তনের সাথে সিভিল সার্ভিসের প্রধান পদগুলোতেও পরিবর্তন আসে।
চীন
চীনের সিভিল সার্ভিস একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা যা ঐতিহ্যগতভাবে চীনের সরকারের বেসামরিক কাজ সম্পাদনার জন্য মেধাভিত্তিক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে বিয়োগপ্রাপ্ত হন। যোগ্যতার ভিত্তিতে সিভিল সার্ভিসের প্রাচীনতম উদাহরণগুলির মধ্যে একটি হলো চীনের ইম্পেরিয়াল আমলাতন্ত্র।
- চীনের প্রথম রাজবংশ কিন রাজবংশের (Qin Dynasty : 221–207 BC) প্রথম কেন্দ্রীভূত চীনা আমলাতান্ত্রিক সাম্রাজ্য ও প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। পরবর্তীতে অন্যান্য রাজবংশের শাসনের সময় তা বিভিন্ন সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে থাকে ও অধিক সুসংগঠিত হয়।
- সং সাম্রাজ্য (Song Dynasty – 960–1279) প্রথম যোগ্যতা (jinshi degree) ও পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন ঘটায়। ১০৬৫ সাল থেকে প্রতি তিন বছর পর পর নিয়মিত পরীক্ষার প্রচলন করা হয়।
- মিং সাম্রাজ্যের (Ming dynasty – 1368–1644) সময় সিভিল সার্ভিস সিস্টেম চূড়ান্ত রূপে পৌঁছায় এবং পরবর্তীতে কিং সাম্রাজ্যও এই পদ্ধতিই অনুসরণ করে। এই সময় সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ নিজের এলাকায় নিয়োগ না পাওয়া, এক স্থানে তিনবছরের বেশি দায়িত্ব পালন না করা ইত্যাদি নিয়ম অন্তর্ভূক্ত হয়। তাছাড়া, উচ্চপদের জন্য যোগ্যতার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জিনিস অন্তর্ভূক্ত এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য শাস্তির বিধান করা হয়।
- আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার মাঝে ১৯০৫ সালে কিং রাজবংশ কর্তৃক শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয় এবং পূর্বে বিদ্যমান সিভিল সার্ভিস সিস্টেমটি 1911/12 সালে রাজবংশের সাথে উৎখাত করে দেওয়া হয়েছিল।
- চীনে ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর মূলত বর্তমান রাষ্ট্রীয় সিভিল সার্ভিসের প্রচলন ঘটে। সাধারণত কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সংশ্লিষ্টরাই এই সার্ভিসে যোগদান করে।
চীনে সিভিল সার্ভিসের চাকরিকে ‘Iron Rice Bowl’ বলা হয়। চাকরির নিরাপত্তা ও উচ্চ বেতনের জন্য এই নামকরণ করা হয়েছে। চীনের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা মান্দারিন ভাষায় হয় ‘Guako’।
জাপান
জাপানের পাবলিক সার্ভিস সেক্টর সেদেশের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দ্বারা গঠিত। এই কর্মকর্তাদের একটি মেধাভিত্তিক প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
- জাপানের নারা সাম্রাজ্যের (Nara period – 710–784) সময় জাপানের পাবলিক সার্ভিসের সংগঠিত কাঠামো দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসকের শাসনামলে তা পরিমার্জন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে আরো সুংগঠিত হতে থাকে।
- ১৯৯২ সালে জাপানের সিভিল সার্ভিসের সাথে সম্পর্কিত একটি শ্রেণিকে Elite Bureaucracy – এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। জাপানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের অংশ এই Elite Bureaucrat রাই মূলত জাপানের মূল ক্ষমতা উপভোগ করে। Elite Bureaucrat রা জাপানে Kanryo নামে পরিচিত।
- ১৯৯০ এর দশকে Elite Civil Service এর সংশোধন ও পরিমার্জন হয়। এতে আমলাতন্ত্রের ক্ষমতা হ্রাস করা হয় এবং রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
- National Personnel Authority (NPA) জাপানের সিভিল সার্ভিসের প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার আয়োজন করে।
- কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জাপানের সিভিল সার্ভেন্টরা তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। ক্যাটাগরিগুলো হলোঃ
· এলিট প্রফেশনালস বা বিস্তৃত সেবা প্রদানকারী – নীতি নির্ধারণ ও গবেষণার সাথে জড়িত।
· সাধারণ সেবা প্রদানকারী – প্রধানত রুটিনকাজ সম্পন্ন করে।
· বিশেষজ্ঞ বা স্পেশালিস্ট – ট্যাক্স ইন্সপেক্টর, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার, চিকিৎসক এবং শিক্ষক।
পাবলিক সার্ভিস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিবস:
- ৮ এপ্রিল: বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন দিবস।
- ২৩ জুন: আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস দিবস।
- ২৩ জুলাই: জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস।
উপসংহার
সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহ শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। এর কারণ হিসেবে সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা, মর্যাদা ও ক্ষমতা, উচ্চ বেতন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে চাকরি হারানোর ভয়, সামাজিক চাপ বা ব্যক্তিগত ইচ্ছাও রয়েছে।



