৪৭তম বিসিএস শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির গাইডলাইন
প্রিয় চাকরির প্রত্যাশীগণ, ৪৭তম বিসিএস শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির গাইডলাইন সংক্রান্ত ব্লগে আপনাদের স্বাগতম। ইতোমধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা! আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এই পরীক্ষার আগের এই সময়টুকু কাজে লাগাতে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে; যেমন— নিয়ম করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শরীর ও মন ভালো রাখা, যেসব বিষয়ে দুর্বলতা আছে তার গুরুত্ব অনুযায়ী রিভিশন করা এবং মূল পরীক্ষার অনুকরণে নিয়মিত মডেল টেস্ট দেওয়া।
কারণ, বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যেমন দরকার, তেমনি শেষ সময়ে স্পেশাল প্রস্তুতিও খুব জরুরি। বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ধাপ—প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এই শেষ সময়ের গোছানো পড়াশোনার ওপর আপনার সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করবে।
শেষ সময়ের প্রস্তুতি বিষয়ক কিছু পরামর্শ-
➝ এই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে একেবারে নতুন কোনো টপিক নিয়ে বেশি সময় ব্যয় না করাই ভালো। এখন সময় বেঁধে টার্গেট করে যা কিছু পড়েছেন তা রিভিশন করতে হবে।
➝ শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি হবে সম্পূর্ণ ‘টাইম-বাউন্ড’। ক্যালেন্ডারের ঘর ও ঘড়ির কাঁটা ধরে ঠিক করতে হবে প্রতি বিষয়ের রিভিশনে কত সময় বরাদ্দ করতে চাচ্ছেন! এ সময়ে পরিকল্পনা ছাড়া আগালে প্রস্তুতি কার্যকরী হবে না।
➝ ‘অপরচুনিটি কস্ট’ হিসাব করে পড়ুন। কিছু টপিকে আপনার দুর্বলতা থাকবে— এটা মেনে নিন। এবার মনে করুন, আপনার হাতে সময় আছে দুই ঘণ্টা, এই সময়ে আপনি দুই নিয়মের গণিত রিভাইজ করলে দুই মার্কস কাভার করার প্রবল সম্ভাবনা আছে। আবার ২০০টি vocabulary শিখতেও আপনার ২ ঘণ্টা লাগবে, কিন্তু আপনি নিশ্চিত না— এই শব্দগুলো থেকে একটিও কমন পড়বে কিনা। সেক্ষেত্রে, আপনার উচিত আগে গণিতের দুইটি নিয়ম শিখে নেয়া।
➝ যে বিষয়গুলো আপনার কাছে সহজ মনে হয় বা ভালো দক্ষতা আছে, সেগুলোকে সেফ জোনে রাখার মতো করে পড়ে ফেলুন। বিশেষত, নিজের ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাবজেক্টে সর্বাধিক নম্বর নিশ্চিত করার চেষ্টা রাখুন।
➝ সকল বিষয়ের প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করুন। সঠিক উত্তর ব্যাখ্যাসহ বুঝে পড়লে মনে থাকবে।
➝ ৬০ দিনে ১৩৫ নম্বরের “গুরুত্বপূর্ণ টপিকের” প্রস্তুতি রুটিনসহ চলমান রুটিনগুলো পরীক্ষা দিন। এছাড়া, ২০ দিনে বিষয়ভিত্তিক রিভিশনের জন্য স্পেশাল রুটিনও দেওয়া হয়েছে, যা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে অপরিহার্য।
➝ যত বেশি সম্ভব মডেল টেস্ট দিন। সম্ভব হলে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ফুল মডেল টেস্টে অংশ নিন। Live MCQ অ্যাপে “৪৭তম বিসিএস বিষয়ভিত্তিক রিভিশন ও ফাইনাল মডেল টেস্ট রুটিন [রাউন্ড – ৩]”-এর মডেল টেস্টগুলো অবশ্যই দিতে হবে। এছাড়া আর্কাইভ থেকে OMR দিয়ে মডেলটেস্টসহ সকল পরীক্ষা দিতে পারবেন।
➝ বই ও নিজের করা নোটখাতা হাইলাইট করে রাখুন। কয়েকটা টপিক পড়ার পর রিভিশনের সময় শুধু হাইলাইট করা অংশে চোখ বুলিয়ে নিতে পারবেন। এতে বারবার রিভিশন দেওয়া সহজ হবে।
➝ নিজের প্রস্তুতি যাচাই করার দারুণ কার্যকরী একটা উপায় হলো শুধু সঠিক উত্তর মার্ক করার অভ্যাস করা। অর্থাৎ, শুধু যে প্রশ্নগুলো আপনি নিশ্চিতভাবে জেনে উত্তর দিতে পারবেন, শুধু সেগুলোই দাগাবেন। এভাবে প্রাকটিস করে আপনি যদি ১৩০টি সঠিক উত্তর মার্ক করতে পারেন, তাহলে ধরা যায় আপনি পরিপূর্ণ প্রস্তুতির পথে আছেন। সেক্ষেত্রে অজানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নেগেটিভ মার্কিংয়ে কতটা নম্বর পাচ্ছেন বা হারাচ্ছেন– তার ওপরই রেজাল্ট নির্ভর করবে।
বিষয়ভিত্তিক রিভিশন কীভাবে করবেন?
শেষ এই এক মাসে কে কিভাবে রিভিশন করবেন— এটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যক্তিগত সুবিধা, দক্ষতা ও দুর্বলতার ওপর নির্ভর করে। তবে মোটাদাগে কিছু প্রমাণিত কার্যকর টিপস ফলো করতে পারেন। যেমন, শুরুতেই সাবজেক্ট ধরে ধরে রিভিশন করে তারপর সম্পূর্ণ সিলেবাসের ওপর মডেল টেস্ট দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সহজ বিষয় বা নিজের যেটা স্ট্রং জোন— সেটা আগে শুরু করা উচিৎ। কারণ এই বিষয় বা টপিকের মার্কস মিস করা যাবে না।
➝ কোনো বিষয়ে দুর্বলতা থাকলে তাঁর পেছনে আলাদাভাবে কিছুটা সময় দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকের দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের “সাবজেক্ট কেয়ার” বাটন থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে পারেন। এছাড়া ‘’টপিকগুরু ফিচার’’ থেকে ওই টপিকের MCQ প্রশ্নগুলো ভালো করে স্টাডি করতে হবে।
➝ এভাবে অল্প দিনের মধ্যে কয়েকটি সাবজেক্ট শেষ করা গেলে তা আপনার মনোবল বাড়াবে। তবে একটানা একই বিষয় পড়তে একঘেয়ে লাগলে প্রতি সাবজেক্টের কয়েকটি করে টপিক পড়ে পরীক্ষা দিতে পারেন।
➝ সেসব বিষয়ের সিলেবাস তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত সেসব বিষয় দিয়ে শুরু করতে পারেন, যেমন- বিজ্ঞান। এই বিষয় থেকে অল্প পড়ে বেশি মার্ক সিকিওর করা যায়। আর এই বিষয়ের প্রশ্ন সাধারণত হুবহু কমন আসে। বিগত বছরের পরীক্ষায় এসেছে সেসব প্রশ্ন বেশি বেশি অনুশীলন করুন।
➝ বিজ্ঞানের মতোই ‘কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি’ এবং ‘ভূগোল ও নৈতিকতা’ বিষয়ে রিভিশন শেষ করলে কম সময়ে বেশি নম্বর কাভার হবে। এসব বিষয়ের সিলেবাসও তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত। বিভিন্ন বিসিএস ও অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় এসব বিষয়ের ওপর যেসব প্রশ্ন এসেছে তা পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
➝ বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়; একইসঙ্গে এটি অনেকের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং বটে। কিন্তু ভালো প্রস্তুতি নিলে এই বিষয়ে ৪৫ মার্ক পর্যন্ত কমন পাওয়া সম্ভব। এই পর্যায়ে নতুন বই বা ম্যাগাজিন কেনার প্রয়োজন নেই। সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য Live MCQ-এর সাম্প্রতিক সমাচার ও নিউজ পিকার পড়লেই হবে।
➝ মানসিক দক্ষতা বিষয়টি তুলনামূলক সহজ ও মজার। একটু মাথা খাটিয়ে বুঝে বুঝে পড়লে এই বিষয়ে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। এজন্য Live MCQ-এর মানসিক দক্ষতা রুটিনের ক্লাস, পিডিএফ ও পরীক্ষা আপনাদের কাজে আসবে। বিগত সালের প্রশ্ন ভালোভাবে স্টাডি করলে এই বিষয়ে ভালো নম্বর আসবেই। সুনির্দিষ্ট কিছু প্যাটের্নের প্রশ্ন আছে এই সেগমেন্টে। তাই শর্টকাট টেকনিক ও সূত্রগুলো ভালোভাবে ঝালাই করে নিন।
➝ ম্যাথে যারা দুর্বল, তারা নতুন করে কঠিন টপিক ধরবেন না। বরং নিয়মিত প্রশ্ন অনুশীলনের মাধ্যমে সহজ ও মাঝারি স্তরের অংকগুলো বারবার প্র্যাকটিস করুন। ৯ম-১০ম শ্রেণির গণিতও বইয়ের অংকগুলো ভালো করে রিভিশন দিতেই হবে। প্রতিদিন অন্তত ১-১.৫ ঘণ্টা সময় দিন গণিতে। স্টাডি ম্যাটেরিয়াল থেকে পড়ে পরীক্ষা দিন। শর্টকাটের জন্য ভালো কোনো বই ফলো করতে পারেন। এতে দ্রুত উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
➝ বাংলা ও ইংরেজি— এ দুই বিষয়ে নম্বর বেশি থাকায় রিভিশনে সময়টা একটু বেশি দিতে হবে। সাহিত্য ও ব্যাকরণ অংশ মিলিয়ে অন্তত ৩ ঘণ্টা এই দুই বিষয়ের জন্য রাখতে পারেন। তবে বাংলা সাহিত্যের চেয়ে ইংরেজি সাহিত্যে কম সময়ে বেশি নম্বর নিশ্চিত করা যায়। শুধু জব সল্যুশন পড়েই ইংরেজি সাহিত্যের ১৫ নম্বরের মধ্যে অন্তত ৯-১০ নম্বর কমন পাবেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজন অন্যান্য প্রস্তুতি-
বিসিএস শুধু পড়াশোনা করে অর্জিত জ্ঞানের পরীক্ষা নয়। এটা একটা লাইফ-স্টাইল। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক ধৈর্যেরও পরীক্ষা দিতে হয়। একটি বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অনেকক্ষেত্রে কয়েক বছরও কেটে যায়। কয়েক দফায় তারিখ বদলের কারণে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলির জন্যও আপনাদের অনেক অপেক্ষা করতে হলো। এই শেষ সময়ে পৌঁছে আপনাদের দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম যাতে সামান্য অবহেলা বা অসতর্কতার কারণে ব্যর্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মানসিক প্রস্তুতি:
অন্যদের তুলনায় আপনার প্রস্তুতি ভালো হয়নি ভেবে ভয় পাচ্ছেন? এ সময়ে এমন ভাবনা মনে আসা স্বাভাবিক। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে বেশিরভাগ প্রার্থীরই এমন হতাশা গ্রাস করে। পড়তে পড়তে মনে হতে পারে ভুলে যাচ্ছেন, অসুবিধা নেই। ভালোভাবে বারবার রিভিশন করলে পরীক্ষার হলে অপশন দেখলে ঠিকই উত্তর মনে পড়বে বা আইডিয়া করে সঠিক অপশন দাগাতে পারবেন।
তাছাড়া মনে রাখবেন—বিসিএসের ভালো প্রস্তুতি থাকলে আরও অনেক নন-ক্যাডার ও সরকারি- বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যায়। তাই অযথা এত চাপ নেওয়ার কোনো কারণ নেই। পজেটিভ থাকুন, মনোবল নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
শারীরিক যত্ন:
চোখ, মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ দিবেন না। একটানা না পড়ে, ছোট ছোট ব্রেক নিয়ে পড়ুন। পড়ার সময় বসার ধরন ঠিক রাখুন। ঋতু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে বাড়তি সতর্ক থাকুন। ছোটখাট অসুখে যদি সপ্তাহখানেক সময়ও চলে যায়— তা-ও রিভিশনের জন্য বড় ক্ষতি।
ঘুম কমালে দিনভর ক্লান্তি আসবে। তাই অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। সামান্য হলেও বাইরে হাঁটাহাঁটি বা বিনোদনের জন্য কিছুটা সময় রাখুন।
পরিশেষে,
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের এই এক মাসে পুরোদমে রিভিশন চালিয়ে যান। Live MCQ অ্যাপের ৪৭তম বিসিএস রুটিনগুলো অনুসরণ করুন ও নিয়মিত পরীক্ষা দিন।
আপনাদের স্বপ্নপূরণের পথে আমরা আছি শেষ পর্যন্ত!
ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণায়,
Live MCQ টিম